শিশুর পেটে কৃমি নিয়ে যা জানা দরকার

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

কৃমি কেন হয়, হলে ক্ষতি কী আর সমাধানেই বা কী করা যায়– এগুলো নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ডা. ফারিয়া তুজ ফাতিমা।

শিশুর পেটে কৃমি হলে দ্রুত ব‍্যবস্থা নিতে হবে
দুনিয়াতে ২০,০০০ ধরনের কৃমি আছে।

বর্তমানে কৃমি আক্রান্ত মানুষের সংখ‍্যা সারা পৃথিবীতে মোট ২ বিলিয়ন। শিশুর পেটে কৃমি হওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। পায়খানার সাথে কৃমি বের হওয়া ছাড়াও শিশুর ওজন না বাড়া,খাবারে অরুচি বা অনাগ্রহ ও পুষ্টিহীনতা– এগুলোও কৃমির লক্ষণ।

কৃমি কী

কৃমি এক ধরনের পরজীবী যারা সাধারনত স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে বা বংশবৃদ্ধিতে অক্ষম, বেঁচে থাকার জন্য তাদের একটি পোষক দেহ (Host) প্রয়োজন, এবং মানুষের শরীরই কৃমির প্রধান পোষক (Host)।

কৃমি মানুষের অন্ত্রে বেঁচে থাকে এবং বংশবিস্তার করে। কারো পেটে কৃমির পরিমাণ বেড়ে গেলে মারাত্মক রোগ হতে পারে।

কৃমি কত ধরনের হয়

দুনিয়াতে ২০,০০০ ধরনের কৃমি আছে। কৃমির আকার, পোষক দেহে কৃমির অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে এদের নানাভাবে শ্রেণীবিন্যস্ত করা হয়েছে।

উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশে কৃমির সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশের জলবায়ু ও ঘনবসতির কারণে কৃমির বংশবৃদ্ধি ও বিস্তার বেশি হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু এলাকায় কৃমির সংক্রমণ বেশি। 

বাংলাদেশে যেই কৃমিগুলির সংক্রমণ বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো–

গোলকৃমি ( Ascaris Lumbricoides) এরা বাদামি বা গোলাপি রঙের হয়। লম্বায় ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। 

বক্র কৃমি বা হুক ওয়ার্ম ( Ancylostoma Duodenale, Necator Americanus) এরা ফ্যাকাশে ধূসর বা কিছুটা গোলাপী। শরীরের অন্যান্য অংশের চেয়ে মাথাটি কিছুটা বাঁকানো, যা অনেকটা হুকের আকৃতি গঠন করে। এরা ৫ মিলিমিটার থেকে ১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। 

সুতা কৃমি (Enterobius vermicularis) সুতার মতো সাদা। লম্বায় ২ মিলিমিটার থেকে ১২ মিলিমিটার। 

কৃমি সংক্রমণের লক্ষণ

পেটে কৃমি হলে শিশুর পায়খানার সাথে ছোট ছোট কৃমি বের হয়। অনেক সময় শিশুর বমির সাথেও কৃমি বেরিয়ে আসে।কিন্তু পায়খানায় কৃমি দেখা না গেলেও অনেক লক্ষণ আছে যা কৃমি হলে হতে পারে। আবার এসব লক্ষণ অন‍্য রোগের কারণেও হতে পারে। তাই আমেরিকাতে এসব লক্ষণ দেখলে আগে শিশুর পায়খানা পরীক্ষা করে দেখা হয় তাতে কৃমির ডিম পাওয়া যায় কিনা। 

লক্ষণগুলি হল:

১. ওজন কমে যাওয়া

২. খাবারে অরুচি/খেতে না চাওয়া

৩.পেট ফুলে যাওয়া

৪. পেটে ব‍্যথার ফলে কান্নাকাটি বেশি করা 

৫. খেলাধুলায় অনাগ্রহ বা দুর্বল ভাব 

৬. বমি বমি ভাব বা বমি

৭. ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা 

কৃমি হলে বাচ্চার খাবারে অনীহা তৈরি হয়
পেটে কৃমি হলে বাচ্চার খাবারে অনীহা তৈরি হয়

৮. রাতের বেলা ঘুমের সময় মলদ্বারের আশেপাশে চুলকানি

৯. মলদ্বারের আশেপাশে ছোট ছোট সাদা সুতাকৃমির উপস্থিতি

১০. পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া

১১. রাতে ঘুমাতে না পারা/ছটফট করা

অন্ত্রে কৃমির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে Intestinal Obstruction, জন্ডিস, এপেন্ডিসাইটিস,  ফুসফুসের সংক্রমণ, রক্তশূন্যতাসহ নানা জটিলরোগও হতে পারে।

কৃমির সংক্রমণ কিভাবে হয়

পূর্ণবয়স্ক কৃমি মানুষের অন্ত্রে বসবাস করে এবং সেখানেই ডিম পাড়ে। কৃমি আক্রান্ত মানুষের পায়খানার সাথে কৃমির ডিম বের হয়ে যায়। এবং মাটিতে মেশে। সেই মাটিতে উৎপন্ন শাকসবজি না ধুয়ে খেলে, খালি পায়ে মাটিতে হাঁটলে, হাত ভালোভাবে না ধুয়ে খাবার খেলে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।

কোনো খাবার (যেমন কলা বা চকলেট) খেয়ে কৃমি হয় না। আবার পরিবারের একজন কৃমি আক্রান্ত হলে অন‍্যদেরও হবার আশঙ্কা থাকে। কারণ কৃমি আক্রান্ত হবার অন‍্যতম প্রধান কারণ অপরিস্কার টয়লেট এবং পরিবেশ। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবে শিশু এবং বয়স্ক উভয়েরই কৃমির সংক্রমণ বাড়ে।

ঘনবসতি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ত্রুটিপূর্ণ পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা, স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার না করা, অপরিষ্কার পরিবেশে রান্না করা এবং সেই খাবার গ্রহণের মাধ‍্যমে কৃমি সংক্রমণ বাড়ে।  

মাটি থেকে সংক্রমণ

দূষিত মাটি থেকেই শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের কৃমি যেমন বক্র কৃমি, গোল কৃমি, ফিতা কৃমি, হুইপওয়ার্ম (whipworms)  ইত্যাদি সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়।

শরীরে কৃমি আছে এমন কোনো মানুষ যখন মাটিতে পায়খানা করে, তখন কৃমির ডিম মাটিতে যায়। সেই ডিম শুরুতে লার্ভাতে পরিণত হয়। লার্ভা হলো অপরিণত কৃমি। এই লার্ভা পরে কৃমিতে পরিণত হয়। শিশু সংক্রমিত মাটিতে খালি পায়ে হাঁটলে কিংবা হামাগুড়ি দিলে শিশুর বক্রকৃমি হতে পারে কারণ এর লার্ভা বা অপরিণত কৃমি শিশুর পায়ের চামড়া দিয়ে শিশুর শরীরে ঢুকতে পারে।

পানির মাধ্যমে সংক্রমণ

কিছু কৃমি পানিতে বংশবিস্তার করে। লেক, বাঁধ এবং জলাশয়ের পানি অর্থাৎ বদ্ধ জায়গার পানিতে এমন কৃমি থাকে। এমন পানিতে খেললে, গোসল করলে কিংবা সাঁতার কাটলে, এমন জলাশয়ের পানি খেলে কিংবা ওই পানি দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে শরীরে কৃমি সংক্রমণ হতে পারে।

বাথটাবে বা সুইমিং পুলে কৃমি আক্রান্ত কারো সাথে গোসল করলে শিশুর কৃমি হতে পারে। 

শিশুরা সাধারণত কৃমিতে বেশি আক্রান্ত হয় কারণ তাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের চেয়ে কম থাকে।

খাবারের মাধ‍্যমে কৃমি

যে সকল শাক, সবজি কৃমি সংক্রমিত মাটিতে জন্মায়, সেসব শাক-সবজি খুব ভালোভাবে না ধোয়া হলে এসব শাক-সবজিতে বক্রকৃমি, হুইপওয়ার্ম এবং গোলকৃমির ডিম থেকে যায়। এই শাক-সবজিগুলো ভালো করে ধুয়ে না খেলে শিশুর শরীরে কৃমি সংক্রমণ হতে পারে।

যেসব প্রাণী জলাশয়ে অথবা জলাশয়ের আশেপাশে থাকে; যেমন মাছ, গবাদি পশু, ভেড়া, ছাগল এদের মধ্যেও ফিতাকৃমির সংক্রমণ হতে পারে। তাই ভালোভাবে রান্না না হওয়া কাঁচা মাছ, মাংসের মধ্যেও কৃমি থাকতে পারে।

কৃমি আক্রান্ত মানুষের মাধ‍্যমে

শিশু যদি কৃমি আছে এমন কোনো মানুষের সংস্পর্শে আসে এবং এক্ষেত্রে যদি ঠিকঠাক স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয়, তবে তার থেকে শিশুর শরীরে কৃমি সংক্রমণ হতে পারে। গুড়াকৃমি বা পিনওয়ার্ম এভাবে শিশুর দেহে সংক্রমিত হয়।

অপরিস্কার হাত কিংবা ঠিকঠাকভাবে ধোয়া হয়নি এমন হাতে এবং হাতের আঙুলের নখের নিচে কৃমির ডিম থেকে যেতে পারে। এই কৃমির ডিম হাত থেকে শিশুর খেলনায় কিংবা সরাসরি শিশুর মুখে চলে যেতে পারে। সুতা কৃমি বিছানা চাদরে এবং জামাকাপড়ে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

কৃমি কি শিশুর জন‍্য ক্ষতিকর

অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃমি সংক্রমণ শিশুকে মারাত্মক অসুস্থ করে না। শিশুর শরীরে সাময়িক অস্বস্তি তৈরি হয়। ঘুমাতে, খেতে কষ্ট হয়। তবে এর চিকিৎসা না করানো হলে কৃমির কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণের ফলে পুষ্টিহীনতা, ওজন কমে যাওয়া এমনকি রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়ার মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে।

কৃমি সংক্রমণের ফলে পেট এবং প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশান এবং অন্ত্রে ‘ব্লক’ তৈরি হতে পারে।

এভাবে শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে শিশুর অসুখবিসুখ বেড়ে যায়। 

ফিতাকৃমির সংক্রমণ মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে যদি এর সংক্রমণের ফলে ব্রেইনে ‘সিস্ট’ জন্মাতে শুরু করে। যদিও ফিতা কৃমির সংক্রমণ সহজে হয়না, তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।দীর্ঘ মেয়াদে শিশুর শরীরে কৃমি সংক্রমণ শিশুর ভবিষ্যত শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং শিশুর বেড়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে যখন কৃমি সংক্রমণ থেকে রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া এবং পুষ্টিহীনতা তৈরি হয় তখন এ সকল সমস্যা হতে পারে। সময়মতো ঠিকঠাক চিকিৎসার মাধ্যমে এসব সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শিশুর পেটে কৃমি আছে কিনা কিভাবে বুঝব

আপনার শিশুর কৃমি আছে কি নেই তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো শিশুকে ডাক্তার দেখানো। আমেরিকাতে  শিশুর শরীরে কৃমি সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা বুঝতে ডাক্তার নিচের পরীক্ষাগুলোর মধ্যে থেকে যে কোনো একটি পরীক্ষা করে থাকে।

  • পায়খানা পরীক্ষা করা: ডাক্তার শিশুর পায়খানার একটা নমুনা বা ‘স্যাম্পল’ চাইবে। সেই নমুনা ল্যাব এ পরীক্ষা করে দেখা হবে এতে কৃমি বা কৃমির ডিম রয়েছে কিনা।
  • ‘স্টিকি টেপ’ পরীক্ষা: সুতা কৃমির জন্য এ পরীক্ষাটি করানো হয়। এক্ষেত্রে কৃমির ডিম নেয়ার জন্য শিশুর পাছায় একটি আঠালো টেপ লাগানো হয়। তারপর সেই টেপটি ল্যাব এ পরীক্ষা করে দেখা হয় তাতে কৃমির ডিম রয়েছে কিনা।
  • নখের আঙুলের নীচে পরীক্ষা করা: ডাক্তার শিশুর আঙুলের নখের নীচের অংশ কৃমির ডিম এর জন্য পরীক্ষা করতে পারে।
  • কটন-বাড দিয়ে পরীক্ষা: ডাক্তার বা নার্স হয়তো শিশুর পাছায় কটন-বাড ঘষে কৃমির ডিম আছে কিনা দেখতে পারেন।
  • আলট্রাসাউন্ড টেস্ট: সাধারণত শিশুর শরীরে কৃমি সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করলে এই পরীক্ষা টি করা হয়। আলট্রাসাউন্ড টেস্ট করার মাধ্যমে ডাক্তার শিশুর শরীরে ঠিক কোন জায়গায় কৃমি রয়েছে তা খুঁজে বের করেন।
কৃমি সংক্রমণের চিকিৎসা

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই শিশুকে কৃমির ওষুধ দেয়া উচিত নয়। প্রায় সব ধরনের কৃমি সংক্রমণের চিকিৎসাই মুখে খাওয়ার ওষুধ (ওরাল মেডিকেশন) এর মাধ্যমে করা সম্ভব। শিশুর কী ধরনের কৃমি সংক্রমণ হয়েছে তার ভিত্তিতেই ডাক্তার ওষুধ অথবা কৃমিনাশক চিকিৎসা দেবেন। কৃমির কারণে শিশুর এনিমিয়া হলে আয়রন ‘সাপ্লিমেন্ট’ এরও প্রয়োজন হতে পারে।

নিজ থেকে কিংবা ওষুধ বিক্রেতার পরামর্শে কোনো ওষুধ কিনবেন না কারণ কিছু কিছু কৃমিনাশক চিকিৎসা ২ বছরের ছোট শিশুর শরীরের জন্য অনুপযুক্ত হতে পারে। এছাড়া কোনো কোনো বাবা-মা কৃমি সারানোর জন্য হারবাল ওষুধের দিকে ঝুঁকে থাকেন। কৃমি সারানোর ক্ষেত্রে হারবাল ওষুধের কার্যকারিতার কোনো প্রমাণ নেই। তাই শিশুকে হারবাল ওষুধ দেয়ার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

কৃমি সংক্রমণ খুব সহজে হয়। যার একবার কৃমি হয়েছে তার আবার কৃমি সংক্রমণ হওয়াও খুব সাধারণ। তাই শিশুর কৃমি হলে ডাক্তার শিশুর পুরো পরিবারকেই তাদের কৃমি না থাকলেও নিরাপদ থাকার জন্য চিকিৎসা নেওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে সাধারণত কৃমির সংক্রমণে এলবেনডাজল/ মেবেনডাজল জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। এবং প্রতি তিনমাস পরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে কৃমির ওষুধ সেবন করতে বলা হয়। তবে শিশুর বয়সভেদে ওষুধ ও ডোজ আলাদা। 

তাই কোনোভাবেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কৃমির ওষুধ দিবেন না। ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধের পরিমাণ, কখন ও কতবার দিতে হবে তা ভালোভাবে জেনে নিবেন।

কৃমি সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়

যখন আপনার ছোট্ট শিশু হাঁটাচলা করতে শুরু করে তখন তার শরীরে কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এসময়ে শিশুকে নিয়মিত চেক-আপ এর জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান এবং কৃমিনাশক চিকিৎসার সময়সূচী অনুসরণ করুন।

শিশুকে কৃমি সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখতে যা করতে পারেন:

  • শিশুর ডায়পার/প‍্যান্ট নিয়মিত বদলান। বদলানোর পর হাত খুব ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  • ঘর এবং ঘরের আশপাশ পরিস্কার রাখুন। ঘর পরিস্কার করতে ভালো জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।
  • শিশু যখন হাঁটতে শেখে, তখন শিশুকে তার পায়ের মাপ অনুযায়ী ভালোভাবে ফিট হয় এমন জুতো পরান। খেয়াল রাখুন যেন শিশু বাইরে খেলাধুলা করার সময় ভালোভাবে পা ঢাকা জুতো পরা থাকে। খেলাশেষে বাসায় ফেরার পর শিশুর হাত এবং পা ভালোভাবে ধুয়ে দিন।
  • কাদাযুক্ত খেলার জায়গা , স্যাঁতস্যাঁতে বালু, মাটি কিংবা মানুষ এবং পশুপাখির পায়খানা থাকতে পারে এমন জায়গা থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। বিশেষ করে, বর্ষাকালে অনেক জায়গায়ই পানি জমে থাকে ফলে দূষিত পানি যেকোনো জায়গা থেকেই আসতে পারে। তাই এসময় আলাদা করে নজর রাখুন।
  • সবসময় খেয়াল রাখবেন শিশু যেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, শুকনো জায়গায় খেলে। শিশুকে কোনো জলাশয় যেমন পুকুর, খাল, লেক ইত্যাদির আশেপাশে জুতা ছাড়া খেলতে দেবেন না।
  • বাসার টয়লেট এবং শিশুর পটি সবসময় পরিস্কার রাখুন। শিশু যতবার প্রস্রাব, পায়খানা করবে ততবার তার পায়ুপথ ভালোভাবে পরিস্কার করুন। পরিস্কার করার পর অবশ্যই সাথে সাথে আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন।
  • শিশুকে সবসময় পরিস্কার টয়লেট ব্যবহার করতে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধুতে শেখান।
  • শিশুর নখ নিয়মিত কেটে ছোট এবং পরিস্কার রাখবেন। কারণ বড় নখের নিচে কৃমির ডিম জমা হতে পারে এবং নখের মাধ্যমে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুকে আঙুল চুষতে কিংবা নখ কামড়াতে নিরুৎসাহিত করুন।
  • সবসময় পরিস্কার, বিশুদ্ধ পানি পান করবেন। পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে বিশুদ্ধ করতে পারেন।
  • ফল, শাক-সবজি বিশুদ্ধ পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। বিশেষ করে শাক ভালোভাবে ধুতে হবে কারণ শাকে মাটি, কাঁকর ইত্যাদি থেকে যেতে পারে।
  • মাছ, মাংস রান্না করার আগে খেয়াল করুন এগুলো ফ্রেশ / তাজা আছে কিনা। মাছ-মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করুন যাতে একটুও কাঁচা না থেকে যায়।
  • পরিবারের মানুষজন এবং বাসায় যারা কাজ করে সবার সাথে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কথা বলুন যেন তারা খাবার রান্না করা, খাবার খাওয়া এবং শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়। এছাড়া কথা বলুন যেন তারা বাথরুম ব্যবহারের পর এবং শিশুর ডায়পার বদলানোর পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয়।
  • পরিবারের মানুষজন এবং বাসার কাজে যারা সাহায্য করে সকলের নিয়মিত কৃমি প্রতিকারের চিকিৎসা বা ডিওয়ার্মিং এর জন্য ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। ডাক্তাররা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি তিন মাসে একবার ডিওয়ার্মিং করানোর পরামর্শ দেয়।
  • বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে, তাদের নিয়মিত ডিওয়ার্ম করান। খেয়াল রাখুন যেন তাদের পায়খানা ঠিকঠাকভাবে দ্রুত পরিস্কার করে ফেলা হয়।
  • শিশুর ব্যবহার্য জিনিস,পোশাক পরিচ্ছদ খেলনা সবকিছু ভালোভাবে ধুয়ে শিশুকে ব্যবহার করতে দিন। নিয়মিত পরিস্কার করুন। 

রেফারেন্স:

  1. Center for Disease Control and prevention (CDC)
  2. Step on to Paediatrics’ by Md Abid Hossain Mollah and Nazmun Nahar
  3. Review of medical microbiology and immunology.

Comment (01)

  1. Dipika Das
    October 13, 2023

    Amr cheler 9 mash e krimi hayeche Dr dekhalam uni bollen ek bochor ar age medicine deoya jaina tabu o uni dilen thn sb kichu thik thak khauya o normal ekhn 11 month running abr krimi hayeche ki kore krimi sarabo ghorua upay e

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *