একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যেমন খাওয়া ঘুমানো সব সময় একই রকম বা ঠিক থাকে না, শিশুর ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই। রুটিন অনুযায়ী চলা শিশুরও অনেক সময় খাওয়া ঘুম এলোমেলো হয়ে যায়। এটা খুব স্বাভাবিক কিন্তু শিশুর ঘুমের সমস্যা হলে বাবা মায়ের ওপর বেশ প্রভাব পড়ে। শিশু কেন ঘুমায় না, শিশুর ঘুমের সমস্যা ও ঘরোয়া সমাধান এখানে বিশদভাবে আলোচনা করা হল।

শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক মাস বাড়ির কেউই খুব বেশি ঘুমাতে পারে না। শিশু ও বাবা-মা সবারই প্রথম দিকে মানিয়ে নিতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগে। সে যখন একটানা সারা রাত ঘুমাতে শিখে যায় তখনও কিন্তু মাঝেমধ্যে শিশুর ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নবজাতক শিশুর (০-৩ মাস) রাতে ঘুম না হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে শিশুর ঘুমের সমস্যা এবং তা সমাধান করা নতুন বাবা মা হওয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কারণ বাচ্চাদের অসুস্থতা লেগেই থাকে, আর অসুস্থ হলে শিশুর ঘুমের সমস্যা হয়। তাছাড়া দাঁত ওঠা, বিকাশগত মাইলফলক, বা রুটিনে পরিবর্তনের কারণেও শিশুর ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
কিন্তু যদি শিশুর ঘুমের সমস্যা লেগেই থাকে, দিনের পর দিন শিশু এবং আপনি কেউ ঘুমাতে পারছেন না বা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারছেন না, তাহলে এটা একটা বড় সমস্যার লক্ষণ।
যেসব বাচ্চার দুধ খেতে খেতে ঘুমানোর অভ্যাস বা পায়ের দুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস, একটু বড় হয়ে গেলে যখন দুধ ছাড়ানোর চেষ্টা করা হয় বা পায়ে দুলিয়ে ঘুম পাড়ানো বন্ধ করা হয় তখন এসব শিশুর ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাঝরাতে একবার ঘুম ভেঙে গেলে তখন ওদের ঘুম পাড়ানোটা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে।
শিশু কেন ঘুমায় না সেটা জানা বাবা ও মা দুজনের জন্যই জরুরি।কারণ আপনি যদি জানেন ঠিক কোন কারণে শিশু ঘুমাতে পারছে না তাহলে তা সমাধান করতে পারবেন।তার কোথায় অসুবিধা হচ্ছে তা না জানলে সমাধান করবেনই বা কী করে। তাই বাচ্চার ঘুমাতে না চাওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলি জানা দরকার।
এখানে শিশুর প্রথম বছরের প্রতিটি ধাপে কী ধরনের ঘুমের সমস্যা হতে পারে এবং ঘুমের রুটিন ঠিক করার সহায়ক সমাধানগুলি রয়েছে।
০ থেকে ৩ মাস শিশুর ঘুমের সমস্যা
জন্মানোর পর নবজাতক অবস্থায় শিশুর ঘুমের রুটিনটা ঠিকঠাক থাকে না, ওরা নিয়মিত ঘুমানোর প্রক্রিয়াতে অভ্যস্ত হতে থাকে। এসময় শিশু সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমায়। সারাদিন ও সারারাত ধরে বারবার খাওয়ার জন্য জেগে ওঠে। ১ এবং ২ মাস বয়সী বাচ্চারা সাধারণত একই পরিমাণে ঘুমায়, প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টার মতো। এর মধ্যে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমায় রাতে আর বাকি ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা দিনে কয়েকবার বিরতি দিয়ে ঘুমিয়ে নেয়। আর ৩ মাস বয়সী বাচ্চাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
অনেক সময়, এত ঘুমানোর পরেও আপনার হয়তো মনে হতে পারে বাচ্চা পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছে না, বা সে যেন একটু বেশি ঝিমাচ্ছে। কিন্তু আসলে, এটা তার স্বাভাবিক ঘুমের ধরন। এ বয়সী বাচ্চাদের পেট খুবই ছোট। খুব তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগে, তাই খাওয়ার জন্য তারা বারবার জেগে ওঠে । এটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।যদি দেখেন আপনার বাচ্চা বারবার ঘুমাচ্ছে আর জেগে উঠছে,তাহলে চিন্তা করবেন না। এটা কোন সমস্যা নয়, আর কিছুদিন পর ওর ঘুমের রুটিনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে।
নবজাতক শিশুর ঘুমের সমস্যা খুবই সাধারণ, আর এ নিয়ে বেশিরভাগ মা-বাবা একটু দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। এই বয়সে সবচেয়ে সাধারণ ৩ টি ঘুমের সমস্যা হলো:
একা শুতে না চাওয়া
অনেক সময় দেখা যায়, আপনি যখন বাচ্চাকে বিছানায় একা রেখে ঘুম পাড়াতে চান, তখন সে অস্থির হয়ে পড়ে, কাঁদে, ছটফট করে, আর কোনোভাবেই শান্ত হয় না। আসলে অনেক বাচ্চাই মায়ের শরীরের ঘ্রাণ ও উত্তাপে নিরাপদ বোধ করে। স্বস্তি পায়। মা ছাড়াও অন্য কেউ সাথে শুয়ে থাকলে বা কোলে নিয়ে থাকলে ওদের মনে হয় যেন কেউ জড়িয়ে ধরেছে, আর তাই তারা বেশি নিরাপদ অনুভব করে।
যা করতে পারেনঃ
১. মায়ের গায়ের কাপড় শিশুর শরীরে জড়িয়ে দিন। মায়ের বুকে কিছুক্ষণ কোনো কাপড় রেখে শিশুর মাথার ওপর বিছিয়ে তার ওপর তাকে শুইয়ে দিন যেন সে মায়ের ঘ্রাণ ও উত্তাপ দুটোই বোধ করে। সতর্ক থাকবেন, নাকের কাছে কোনো কাপড় যে আলগা অবস্থায় না থাকে, যা শিশুর শ্বাসে বাধা কিংবা বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
২. বাচ্চাকে নরম ও আরামদায়ক কাপড় দিয়ে হালকাভাবে জড়িয়ে রাখা যায়, যাকে ইংরেজিতে Swaddling বলা হয়। এতে সে মায়ের পেটের ভেতর আছে এরকম অনুভূতি পাবে। এক্ষেত্রেও মায়ের গায়ের নরম সুতির ওড়না দিয়ে সোয়াডেল করে রাখলে বাচ্চা বেশি আরাম পায়। এমিলকে প্রথম তিন মাস এভাবেই বেসিনেটে রাখতাম। সোয়াডেল করার ১৫ মিনিট আগে ওই কাপড় আমার বুকের ভেতরে রেখে গরম করে নিতাম।

৩. ঘুমের সময় প্যাসিফায়ারও দেয়া যেতে পারে।ঘুমানোর সময় প্যাসিফায়ার দিলে অনেক বাচ্চা শান্ত হয় এবং ভালোভাবে ঘুমাতে পারে। তবে কোন ধরনের স্লিপ পজিশনার (যেমন পজিশনিং পিলো বা রোল) ব্যবহার না করাই ভালো,কারণ এগুলো শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি নির্দিষ্ট ও নিয়মিত ঘুমের রুটিন গড়ে তোলা। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলে, বাচ্চার শরীর ও মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে বুঝে যাবে কখন ঘুমানোর সময়।শুরুতে কষ্ট হবে কাঁদবে, ছটফট করবে কিন্তু ধৈর্য ধরে নিয়ম মেনে চললে, ধীরে ধীরে বাচ্চা অভ্যস্ত হয়ে যাবে। সেই সাথে একা ঘুমানোতেও নিজে থেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে শুরু করবে। সব বাচ্চা প্যাসিফায়ার না নিলেও, কিছু কিছু শিশুর ঘুমের সমস্যা প্যাসিফায়ার দিলেই ঠিক হয়ে যায়।
দিন-রাত গুলিয়ে ফেলা
নবজাতক শিশুর দিন রাত এর কোন বোধ থাকে না, তাই তারা পুরো দিন ঘুমিয়ে কাটায়, আর রাত হলে একদম জেগে থাকে।এটা আপনার জন্য মোটেও আনন্দের বিষয় নয়, শরীর ও মনের উপর প্রচণ্ড প্রভাব পড়ে।
সমাধানঃ নবজাতক শিশু ধীরে ধীরে বাইরের জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে শিখবে, আর তার এই রাত জাগার অভ্যাসও নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে শিশুর তিন মাস বয়স থেকে আপনি কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন যাতে সে দিন আর রাতের পার্থক্য বুঝতে শেখে। যেমন:
- দিনের বেলা ঘুমানোর সময়ও ঘর কিছুটা আলোকিত রাখা, আর রাতের ঘুমের সময় পুরো ঘর অন্ধকার রাখা।
- রাতের খাবারের সময় টিভি বা অতিরিক্ত আলো ব্যবহার না করা, যেন বাচ্চা বুঝতে পারে এটা রাত।
- রাতে ঘুমানোর রুটিন তৈরি করা। পোশাক বদলানো, বই পড়া, গান করা এবং সময় হলে আলো নিভিয়ে দেয়া।
এভাবে ধাপে ধাপে সে রাতের ঘুমের অভ্যাস তৈরি করতে পারবে। তবে মনে রাখবেন, এ বয়সী বাচ্চারা সারারাত ঘুমালেও ঘুমের মধ্যেই কয়েকবার বুকের দুধ খায়। এটি শিশুর ঘুমের সমস্যা নয়। এ সময় ঘুমালেও খাওয়ার পরে তাকে বার্প করাতে হবে। এবং খাওয়ার পরপরই বিছানায় শোয়ানো যাবে না। অন্তত ১৫ মিনিট পিঠ সোজা করে কোলে রাখতে পারেন, যাতে তার বমি না হয়।
যদি রাতে বারবার বুকের দুধ খাওয়া নিয়ে আপনি বিরক্ত বোধ করেন, শিশুর দিনের খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পরপর খাওয়ান এবং খেয়াল রাখুন বাচ্চা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে কিনা। বাচ্চা কতবার প্রস্রাব করছে তা দেখে অনুমান করা যায় যে তার খাওয়া ঠিক মত হচ্ছে কিনা। এরপর, ধীরে ধীরে রাতের খাওয়ানোর সময়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করুন। প্রথম দিকে যদি দুই ঘণ্টা পর পর খায়, তাহলে আস্তে আস্তে সেটা তিন ঘণ্টা পরপর নিন। এভাবে ধীরে ধীরে রাতে খাওয়ানোর সংখ্যা কমে আসবে, তখন বাচ্চার পাশাপাশি আপনারও পর্যাপ্ত ঘুম হবে।
(বিরক্ত না হওয়াই ভালো 🙂)
৪ থেকে ৫ মাস শিশুর ঘুমের সমস্যা
৪ মাস বয়সী শিশুর প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।এর মধ্যে দিনের বেলায় ২ থেকে ৩ বার ঘুমাবে যা মোট ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা হতে পারে। আর রাতে ঘুমাবে ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা।
৫ মাস বয়সী শিশুর রাতে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুমানো স্বাভাবিক। এছাড়া দিনের বেলায়ও ২ থেকে ৩ বার ছোট ছোট ঘুম প্রয়োজন।
এর চেয়ে কম ঘুমালে ধরে নিবেন শিশুর ঘুমের সমস্যা হচ্ছে।
এ বয়সী শিশুদের ঘুমের সমস্যা হওয়ার কিছু স্বাভাবিক কারণ হলো
স্লিপ রিগ্রেশন বা ঘুমের ব্যাঘাত
শিশুর ঘুমের সমস্যা গুলির মধ্যে এটি সবচেয়ে কমন। ৪ মাস বয়সে এসে আপনার শিশু কিন্তু আগের সেই চুপচাপ শান্ত বাচ্চা যে প্রায় সব সময় ঘুমিয়ে থাকত তেমন আর থাকবে না। এখন সে ঘুমের সময় ঘুম বাদ দিয়ে বাকি সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকবে। আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন কিন্তু তার কোন ক্লান্তি নেই। এটি ঘুমের ব্যাঘাত বা স্লিপ রিগ্রেশন নামে পরিচিত, যা বেশ স্বাভাবিক এবং এই বয়সে অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রেই ঘটে।প্রায় ৪ মাসে, তারপর আবার ৬ মাস, ৮ থেকে ১০ মাস, এবং ১২ মাসে (যদিও যে কোনো সময়ে হতে পারে) এমনটা হতে পারে।
চার মাস বয়সী শিশুর ঘুমের সমস্যা মূলত তখন হয় যখন সে আশেপাশের পৃথিবীর সম্পর্কে আরো বেশি জানতে শুরু করে । নতুন খেলনা, মজার কোন জিনিস বা বিভিন্ন মানুষ দেখা তার কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। এসব দেখা বাদ দিয়ে ঘুমানোটা তার কাছে সময় নষ্ট করা মনে হতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাত (sleep regression) নির্ধারণের কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই, কিন্তু যখন আপনি এর মুখোমুখি হবেন, তখন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।যদি দেখেন আপনার শিশু আগে নিয়মিতভাবে লম্বা সময় ধরে ঘুমাতো , আর এখন হঠাৎ করে ঘুমাতে চাচ্ছে না, বা বারবার ঘুম থেকে জেগে উঠছে তাহলে বুঝবেন ঘুমের ব্যাঘাত বা স্লিপ রিগ্রেশন চলছে।
সমাধান
বাচ্চার প্রতিদিনকার রুটিন ঠিকভাবে চালিয়ে যান। যেমন– গোসল করানো, খাওয়ানো,গল্প বলা,ঘুম পাড়ানি গান গাওয়া ও আদর করা।আর খেয়াল রাখবেন দিনের বেলা যেন তার পর্যাপ্ত ঘুম হয় । কারণ রাতে ঘুম না হলে সে অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখন তাকে শান্ত করা আর বেশি কঠিন হয়ে পড়বে।
এছাড়া, এই ঘুমের ব্যাঘাতটা সাময়িক, তাই চিন্তা করবেন না। বাচ্চা ধীরে ধীরে সব পরিবর্তন মানিয়ে নিবে তখন তার ঘুমের প্যাটার্নও আগের মতো হয়ে যাবে।
ন্যাপের রুটিন পরিবর্তন বাচ্চার রাতের ঘুমে সমস্যা তৈরি করতে পারে
বাচ্চারা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের দিনের ঘুম কমে যায়।যদি সে এই নতুন ঘুমের রুটিনে খুশি থাকে আর রাতে ভালো ঘুমায়, তাহলে এটা একটা ভালো মাইলফলক, এগিয়ে যান।
কিন্তু যদি সে কম ঘুমায়, দিনে বেশিরভাগ সময় বিরক্ত থাকে বা রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয়, তাহলে হয়তো সে অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে গেছে। তার ন্যাপ টাইম অর্থাৎ দিনের ছোট ঘুমের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেয়া দরকার।
শিশুর ঘুমের সমস্যার সমাধান
দিনের বেলা প্রতিবার ঘুমানোর আগে তাকে গল্প শোনাতে পারেন বা তার শরীর আলতো মালিশ করে দিতে পারেন অথবা তার রুমে মৃদু কোন সঙ্গীত ছেড়ে দিতে পারেন যা তাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে। একটু ধৈর্য ধরে আপনার চেষ্টা চালিয়ে যান, তার হয়তো রুটিনে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সে ঠিক আগের মতো হয়ে যাবে।
৬ মাস বা তার বেশি বয়সী শিশুর ঘুমের সমস্যা
এই বয়সে শিশুর ঘুমের প্যাটার্ন অনেকটাই বদলে হয়ে যায়। ৬ মাস বয়সী বাচ্চা রাতে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে এবং দিনে ২-৩টা ন্যাপ নেয়।
৯ মাসে, সে রাতে কিছুটা বেশি সময় ঘুমাতে শুরু করবে (১০ থেকে ১২ ঘণ্টা) আর দিনে ২টা ন্যাপ নেবে। ১২ মাসের কাছাকাছি সময়ে, সে শুধু দুপুরে একবার লম্বা ঘুম দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যেতে পারে। তবে বেশিরভাগ বাচ্চার ক্ষেত্রে এটা ১৪ থেকে ১৬ মাসে হয়।
এছাড়া ৬ মাস বয়সের পর থেকেই বাচ্চারা পুরো রাত টানা ঘুমানোর জন্য তৈরি হয়ে যায়।তবে এসময় তাদের শরীর বেশ কিছু বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় যার কারণে শিশুর ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
দাঁতের ব্যথায় ঘুমাতে না পারা
দিনের বেলায় যদি দেখে মনে হয় বাচ্চার দাঁত উঠবে বা এই লক্ষণগুলো দেখা যায়- অতিরিক্ত লালা পড়া,জিনিস কামড়াতে চাওয়া, খাবারের সময় বিরক্ত হওয়া বা অস্বস্তি বোধ করা, তাহলে রাতেও দাঁতের ব্যথার কারণে সে জেগে উঠতে পারে। দাঁত উঠলে বাচ্চাদের অনেক সময় অস্বস্তি হয়, যার কারণে তাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। আপনার বাচ্চা যদি রাতে হঠাৎ জেগে গিয়ে কাঁদে বা বিরক্ত থাকে, সেটা দাঁতের ব্যথার কারণে হতে পারে। এই সময়ে একটু বেশি খেয়াল রাখুন এবং যত্ন নিন। বাচ্চা যেন আরাম পায় এমন ব্যবস্থা নিন, যেমন; কামড়ে খাওয়ার জন্য বিশেষ রিং বা বিস্কিট দিতে পারেন, বরফের টুকরো একটা কাপড়ে পেঁচিয়ে কামড়াতে দিতে পারেন এতে অনেকটা আরাম বোধ করবে। ব্যথা কমে গেলে বাচ্চাও স্বস্তিতে ঘুমাতে পারবে।
দাঁত ওঠার কারণে শিশুর ঘুমের সমস্যা যে কোনো সময় শুরু হতে পারে, বিশেষ করে প্রথম বছরে। কিছু বাচ্চার ৬ মাস বয়সের মধ্যেই প্রথম দাঁত ওঠে এবং তাদের দাঁতের ব্যথা ৩ বা ৪ মাস বয়স থেকেই শুরু হয়। এর মানে হলো দাঁত ওঠার অস্বস্তি বা ব্যথার কারণে তাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে, এমনকি সারাদিন রাত ধরে তারা খিটখিটে বা বিরক্ত থাকতে পারে।
তবে কিছু বাচ্চার ১ বছর হওয়ার আগে দাঁত ওঠে না, তাই তাদের জন্য এই সমস্যা আরেকটু দেরিতে শুরু হয়।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে যাওয়া
অনেক শিশুই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যায় । কখনো কখনো সকাল হবার আগেই উঠে বসে থাকে।যদিও ভোরে ঘুম থেকে উঠা খুবই ভালো অভ্যাস। কিন্তু একজন নতুন মায়ের জন্য সারারাত জাগার পর এত সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে আসলেই কষ্টকর।
সমাধান
শিশু যদি ৬ মাস বয়সী হয়, তাহলে কিছু উপায় চেষ্টা করতে পারেন যাতে সে বেশি সময় ঘুমায়, যেমন তার ন্যাপ শিডিউল পরিবর্তন করা বা ঘুমানোর সময় কিছুটা বদলানো। অনেক বাচ্চাই সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে যায় তাই ভোরবেলা উঠে বসে থাকে ।চেষ্টা করবেন বাচ্চাকে একটু বেশি রাতে ঘুম পাড়াতে, যেন সকালে একটু বেশি সময় ধরে ঘুমায়।চেষ্টা করবেন তার রুমে যেন আলো ও শব্দ না ঢোকে।এতে ঘুম গভীর হবে।
যে কোনো বয়সে ঘুমের সমস্যা
জন্মের প্রথম বছরে বা তারপরেও যেকোনো সময়ে শিশুর ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে দুটো বড় সমস্যা হলো–
ঘুমের রুটিন এলোমেলো হওয়া
শিশুর ঘুমের রুটিন পরিবর্তন হতে কিন্তু খুব বেশি সময় লাগে না । ধরুন ঠাণ্ডার অসুখ হলো বা দাঁতে ব্যথা হলো এতেই তাদের ঘুমের রুটিন পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে ।যেকোন পরিবেশ বা অবস্থার পরিবর্তন হলে শিশুর তার সাথে অভ্যস্ত হতেও কিন্তু বেশ সময় লাগে। যাদের বাবা মা দুজনই চাকরি করেন, একটা লম্বা ছুটির পর যখন তারা আবার কাজে যোগ দেন তখনও বাচ্চাদের এটা মেনে নিতে বেশ সময় লাগে। ঐ সময় দেখা যায় তাদের ঘুম সহ সারাদিনের রুটিনই এলোমেলো হয়ে যায়।আবার ধরুন বাসায় নতুন কোন কেয়ারগিভার বা বাচ্চা লালন পালন করার জন্য লোক রাখা হলো, তাদের সাথে মানিয়ে নিতেও শিশুকে বেশ মানসিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এ সকল কারণে জন্য শিশুর ঘুমের সমস্যা বা রুটিন এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।
ঘুমের সময় এলোমেলো হয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো ভ্রমণ করা। কোথাও ঘুরতে গেলে বাচ্চাদের ঘুমের রুটিন ঠিক থাকে না। এছাড়াও শিশু যখন ডেভেলপমেন্টের একটা বড় মাইলস্টোন পার করে অর্থাৎ নতুন কোন কিছু করতে শিখে, যেমন ‘হামাগুড়ি দিতে শেখা বা প্রথম হাঁটতে শেখা’ এমন সময়ও শিশুর ঘুমের সমস্যা সাময়িকভাবে দেখা দিতে পারে।
যেভাবে সামলাতে পারেনঃ
যখন শিশুর ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন আসে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে একটু বেশি কান্নাকাটি করে বা বিরক্ত থাকে। এসব সময়ে ওকে একটু ছাড় দিতে হবে, কারণ ওর জন্যও সময়টা কঠিন। ঘুম ঠিকমতো না হলে ছোট্ট বাচ্চারা অস্বস্তিতে পড়ে, আর সেটা তারা কান্না বা খারাপ মেজাজ দিয়ে প্রকাশ করে। যখনই সে কোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে, সেই সময়ে বাচ্চারা যে সারাদিনে যে অল্প অল্প করে বারবার ঘুমিয়ে নেয় সেই ঘুমানোর পরিমাণটা কমিয়ে আনুন। তাকে অল্প সময়ের জন্য বারবার ঘুমাতে না দিয়ে একটা লম্বা গ্যাপ রাখুন, যেন যখন ঘুমাবে তখন একটানা অনেকক্ষণ ঘুমায়।এমন সময়ে আপনি যতটা পারেন, ওকে সান্ত্বনা দিন, কোলে নিন, বুকের কাছে রাখুন, বা একটু সময় দিন ঘুমানোর আগে।এই সময়টা সাময়িক, তাই শিশুর ঘুমের সমস্যা দেখা দিলে ধৈর্য ধরে পাশে থাকুন, বাচ্চার ঘুমের রুটিন আবার ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার আপনার আগের নিয়মে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।বাচ্চার সারাদিনের রুটিন অনুসরণ করুন। যেমন, আগে যেমন গরম পানি দিয়ে গোসল করাতেন, তারপর খাওয়াতেন, তারপর গল্প শুনিয়ে ঘুম পারাতেন।রুটিন অনুসরণ করা শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা ওর ব্রেন কে সিগন্যাল দেয় যে “এখন ঘুমানোর সময় হয়েছে।” এভাবে ধীরে ধীরে তার ঘুমের রুটিন আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
শিশু ক্লান্ত তবুও কেন ঘুমাতে চায় না
বাচ্চাকে দেখে খুবই ক্লান্ত মনে হচ্ছে, হাই দিচ্ছে, চোখ কচলাচ্ছে, একটু পরপর কান্না করছে বা সবকিছু নিয়ে খুব জেদ করছে। এসব দেখে মনে হচ্ছে ওর এখনই ঘুমানো উচিত। কিন্তু সে কিছুতেই ঘুমাতে রাজি হচ্ছে না বরং আরো বেশি ছটফট করছে অথবা সবকিছু নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ছে।
এই অবস্থাকে বলে “ওভার টায়ার্ড” বা অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। যখন ওদের ঘুমের সময় পার হয়ে যায় তখন শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তখন না ঘুমিয়ে উল্টো জেদ করতে থাকে।
বেশি ছোট বাচ্চা, যাদের আগে দুধ খাইয়ে বা দোল দিয়ে ঘুম পাড়ানো যেত, হঠাৎ করেই সেগুলোর বিরোধিতা করতে শুরু করে। মানে, ওরা ক্লান্ত তবুও ঘুমাবে না— দোলালে কেঁদে উঠবে, খেতে চাইবে না, ঘুম পাড়ানোটা যেন রীতিমতো একটা যুদ্ধ।
আর ৫-৬ মাস বা তার বড় বাচ্চারা, যারা একটু একটু নিজের মতো ঘুমাতে পারে, তারাও বিছানায় শুইয়ে দিলে ঘুমাতে পারে না বা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুমাতে চায় না, বারবার জেগে ওঠে।
সমাধান
বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতে হলে এমন একটা সময় বেছে নিতে হবে, যখন সে ক্লান্ত, কিন্তু অতিরিক্ত ক্লান্ত না।যখনই তার মধ্যে ঘুমের লক্ষণগুলো দেখবেন যেমন; চোখ কচলাচ্ছে, হাই দিচ্ছে, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, বা অস্থিরভাবে কান্না করছে তখনই ওকে বিছানায় শুইয়ে দিন। এতে ও আরাম করে ঘুমাতে পারবে।
অনেকে মনে করে ,আরেকটু জেগে থাক, তাহলে পরে ভালো ঘুমাবে। তাই বেশি সময় জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, এটা আসলে ভুল ধারণা। বেশি জেগে থাকলে ওরা অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর তখন ঘুমানো আরও কঠিন হয়ে যায়।
তাই চেষ্টা করুন ওকে সময়মতো ঘুম পাড়াতে ‘না দেরি করে, না সময়ের আগে।’ বেশ কঠিন–তবে সম্ভব।
আপনার ছোট্টটার দিনে বা রাতে যত ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন, সেটা যেন মোটামুটি ঠিকঠাক হয় তার খেয়াল রাখুন। যেমন ধরুন; দিনের বেলা যে ঘুমায়, সেই শেষ ঘুম থেকে সন্ধ্যা হওয়ার অনেক আগেই উঠে গেছে। তাহলে চেষ্টা করুন রাতে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দিতে, যেন ঘুমের ঘাটতি পূরণ হয়। কিংবা যদি কোনো রাতে ওর ঘুম ভালো না হয় বা ভোরে খুব তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে, তাহলে সেদিন দুপুরে একটুখানি বেশি সময় ঘুমানোর সুযোগ দিন। এভাবে শিশুর ঘুমের সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা যায়।
ফলে ওর ঘুমের ভারসাম্য বজায় থাকবে, আর ঘুম ভালো হলে শরীর মন দুটোই ফুরফুরে থাকে। তখন বাচ্চার খাওয়া ঘুম সবকিছুই সুন্দরভাবে রুটিন মত চলবে।
অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠার পর ঘুমের সমস্যা
শিশু যদি অসুস্থ থাকে, যেমন; ঠাণ্ডার অসুখ লাগলে বা জ্বর হলে,সে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথায় ঘুমাতে পারে না। শুধু শিশুর ঘুমের সমস্যা হয় এমন না, এমন অবস্থায় বড়দেরও ভালো ঘুম হয় না।
শিশু যখন অসুস্থ থাকে, তখন সব বাবা-মাই তাদের সন্তানকে আরাম দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেন সে একটু আরাম করে ঘুমাতে পারে । যদি তার গায়ে জ্বর থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জ্বর কমানোর ঔষধ দেয়া যেতে পারে। বাচ্চার বয়স ৩ মাসের বেশি হলে অ্যাসিটামিনোফেন ( Acetaminophen) আর ৬ মাসের বেশি হলে আইবুপ্রোফেন ( Ibuprofen) দিতে পারেন, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। মায়ের বুকের দুধও এ সময় শিশুর জন্য বেশ উপকারী।
আর যদি দেখেন সর্দির কারণে ওর নাক বন্ধ হয়ে আছে, কাশি হচ্ছে, তখন ওকে কোলে নিয়ে একটু সোজা করে ধরে রাখুন। ওকে একটু উঁচু বালিশেও শুইয়ে রাখতে পারেন যাতে ওর শ্বাস নিতে সুবিধা হয়, আর ঘুমটা বারবার ভেঙে না যায়
এই অসুস্থতার সময়ে বাচ্চা যদি টানা কয়েক রাত ঠিকমতো না ঘুমায় বা মাঝ রাতে জেগে ওঠে আর তখন ওকে শান্ত করতে আপনি যে কোলে নিচ্ছেন, খাওয়াচ্ছেন বা দোলাচ্ছেন, তাহলে বাচ্চা কিন্তু সেটার সঙ্গেও অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে। এমনকি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও তার এই অভ্যাসটা রয়ে যেতে পারে। তাই যখন দেখবেন সে আগের থেকে কিছুটা ভালো আছে, তখনই ধীরে ধীরে আগের ঘুমের নিয়মে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
যদি দেখেন বাচ্চা আগে ভালো ঘুমাতো, কিন্তু অসুস্থ থাকার সময় ঘুমের রুটিনটা একটু এলোমেলো হয়ে গেছে।এখন যদিও পুরোপুরি সুস্থ তবুও রাত হলে বারবার জেগে ওঠে, আর ঘুমাতে পারে না।কোলে ওঠার জন্য কান্না করে বা আর মাকে খোঁজে, তাহলে যা করবেন-
যখন দেখবেন বাচ্চা আবার আগের মত খেলাধুলা করছে, হাসিখুশি থাকছে, দৌড়ঝাঁপ করছে, অর্থাৎ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে, তখন রাতে ঘুমানোর সেই আগের নিয়মে ফিরে যাবেন। স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসতে ওর কয়েক রাত লাগতে পারে, হয়তো কাঁদবে, আপনাকে ডাকবে। প্রথম কয়েকটা রাত একটু কষ্টকর লাগতে পারে, কিন্তু ধৈর্য ধরুন সে আবার অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আপনি যত বেশি নিয়ম মেনে চলবেন, সে তত তাড়াতাড়ি বুঝে যাবে যে রাত মানে ঘুম, খেলাধুলা করার সময় না।
শিশুর ঘুমের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে একটু বাধা, পরিবর্তন বা ঝামেলা হওয়াটা একদমই স্বাভাবিক। এটা খুব সাধারণ, আর প্রায় সব বাবা-মাই এটা কোনো না কোনো সময় অনুভব করেন।ঘুমে সমস্যা মানেই বড় কিছু নয়, একটু সময়, ধৈর্য আর নিয়ম মেনে চললেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব সমস্যা ঠিক হয়ে যায়।
বাচ্চা না ঘুমালে মা-বাবাও ঘুমাতে পারে না,তাই ওদের ঘুমের সমস্যা হলে মা বাবা অনেক বিপদে পড়ে যায়। অনেক সময় মনে হতে পারে সময়টা খুব কঠিন, আপনি সামলাতে পারছেন না। কিন্তু আসল কথা হলো, এসব সমস্যা সাধারণত সাময়িক এবং সময়ের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে ঠিক হয়ে যায়।এই সমস্যা চিরকাল থাকবে না। বাচ্চা যত বড় হবে, ওর ঘুমের ধরণ, রুটিন সবকিছুই ধীরে ধীরে বদলাবে। সব কিছু সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে।
যারা বাচ্চার একা ঘুমানোর অভ্যাস বা রাতে খাবার অভ্যাস বন্ধ করতে চান নিচের গাইডলাইনগুলি পড়ে দেখতে পারেন। এটা আলাদাভাবে লেখার কারণ এটা যাদের জন্য প্রযোজ্য তারা ফলো করবেন।
এগুলিকে শিশুর ঘুমের সমস্যা বলে আমি মনে করি না। আমি নিজে বাচ্চাকে একা ঘুমাতে দেই না, একসাথেই ঘুমাই। এবং রাতে বারবার দুধ খাওয়ার ব্যাপারে বিরক্ত বোধ করি না। বাচ্চার বয়স তিন বছর। সে মাকে ছাড়া নিজে নিজে ঘুমাতে এখনো পারে না। এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
নিচের দুইটি প্যারাগ্রাফে এএপি–এর গাইডলাইন অনুযায়ী কয়েকটি পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
নিজে নিজে ঘুমাতে না পারা
১২ মাস+ বয়সী বাচ্চা মায়ের বুক দুধ খেতে খেতে ঘুমাবে বা তাকে পায়ে দুলিয়ে ঘুম পাড়ানোটাও খুব স্বাভাবিক। তবে এ বয়স থেকেই তাকে ধীরে ধীরে একা ঘুমানোর ট্রেনিং দেয়া শুরু করা যেতে পারে, যাকে আমেরিকাতে স্লিপ ট্রেনিং বা সেলফ-সুথিং ট্রেনিং বলা হয়।
যেভাবে শেখাবেন
প্রথমে, শিশুর ঘুমানোর রুটিনে পরিবর্তন আনুন। যদি বাচ্চার ঘুমানোর সময় বোতল বা বুকের দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে তার রাতে ঘুমানোর বা ন্যাপ টাইমের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে দেয়ার চেষ্টা করুন। যদি দেখেন বাচ্চা খুব ক্লান্ত তবুও ঘুমাচ্ছে না, তাহলে তাকে ঘুমানোর জন্য তার বিছানায় শুইয়ে দিন।প্রথমে হয়তো কিছুটা বিরক্ত হবে শুয়ে থাকতে চাইবে না, কিন্তু একটু ধৈর্য ধরুন,আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে যাবে। একবার সে নিজে নিজে শান্ত হতে শিখে গেলে, তারপর তার ঘুমের সময়ও ধীরে ধীরে আপনাকে আর প্রয়োজন পড়বে না।
বাচ্চা যখন নিজে নিজে ঘুমানো শিখে যাবে তখন রাতে জেগে উঠলে তার কাছে যাবেন।কিন্তু তাকে কোলে নিবেন না বা খাওয়াবেন না। একবার নিজে নিজে শান্ত হতে শিখে গেলে, তখন শুধু আপনার কণ্ঠস্বর শোনাই যথেষ্ট বা একটু আলতোভাবে স্পর্শ করলেই সে আবার ঘুমিয়ে যাবে।
শিশুকে নিজে নিজে ঘুমাতে শেখানোর পদ্ধতিটা পুরোপুরি আপনার সিদ্ধান্ত, আপনি কোনভাবে আরামবোধ করেন সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ এমন একটা পদ্ধতি ব্যবহার করেন যেখানে বাচ্চাকে একটু কাঁদতে দেওয়া হয়। ধরুন বাচ্চার বয়স ৫ বা ৬ মাস, একটু একটু সব কিছু বুঝতে শুরু করেছে। তখন দেখা যায় সে কান্না করলে মা কোলে নেয় বা খাওয়ায়,আর সেটা সে মনে রাখতে শুরু করে। একটা সময় সে বুঝে ফেলে “আমি কান্না করলে মা আসবে বা কোলে নিবে!”
তাই কিছু বাবা-মা একটু কাঁদতে দেন, যেন বাচ্চা বুঝে যে কান্না করলেই সব সময় মায়ের কোলে যাওয়া যাবে না। প্রথম দিকে একটু কষ্ট হলেও, অনেক বাচ্চা ৩-৪ রাতের মধ্যেই বুঝে যায় যে কান্না করলেও মা তাকে কোলে নিচ্ছেন না, বরং এখন ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে। তখন সে আর কাঁদে না, নিজে থেকেই ঘুমিয়ে পড়ে।এভাবে ধীরে ধীরে একটা ঘুমের রুটিন তৈরি হয়, আর বাচ্চাও রাতে ভালো ঘুমাতে শেখে।
তবে মনে রাখতে হবে, সব বাচ্চার জন্য একরকম পদ্ধতি কাজ নাও করতে পারে। আপনার শিশুর ক্ষেত্রে কোনটা সব থেকে ভাল কাজ করবে সেটা আপনি ভাল বুঝবেন।
আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (AAP) বলে, জন্মের পর অন্তত ছয় মাস বাচ্চাকে মায়ের সাথে একই ঘরে রাখা ভালো, তবে আলাদা বিছানায়। মানে, মা আর বাচ্চা একই রুমে থাকবে, কিন্তু আলাদা আলাদা ঘুমাবে। এতে নিরাপত্তা যেমন থাকে, তেমনি বাচ্চা ধীরে ধীরে নিজের মতো ঘুমাতেও শেখে। একই রুমে থাকার কারণে অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দিলেই সে কাঁদতে থাকে বা মাকে ডাকে। এই সময়টা অনেক চ্যালেঞ্জিং কিন্তু ঘুমের ট্রেনিং এখানেও একই রকমভাবে দিতে হবে।
ঘুমের সময় হলে আপনি তাকে আদর করে বিছানায় শুইয়ে দিন, তারপর ‘শুভ রাত্রি’ বলে ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে আসুন। হয়তো সে কাঁদবে, বা আপনাকে ডাকবে, এখন আপনি যদি প্রতিবারই গিয়ে কোলে নেন বা সান্ত্বনা দেন, তাহলে ও বুঝে যাবে যে কান্না করলেই মা চলে আসেন। তারচেয়ে বরং একটু সময় দিন, প্রথমে হয়তো একটু বেশিই কাঁদবে, কিন্তু ধীরে ধীরে সে নিজেই শান্ত হতে শিখে যাবে।
প্রথম কয়েকটা রাত বাচ্চা এবং মা দুজনের জন্যই খুব কষ্টের, অনেক মন খারাপ লাগবে কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তখন সে বুঝে যাবে যে, ঘুমের সময় হলেই নিজের বিছানায় শুয়ে পড়তে হয়।
এগুলো ছাড়াও শিশুকে ঘুমের প্রশিক্ষণ দেয়ার আরও অনেক পদ্ধতি আছে। যেটা আপনার এবং বাচ্চা দুজনের জন্য সব থেকে ভাল হবে সেটা বেঁছে নিন এবং ধৈর্য ধরে সেটার উপর কাজ করুন, নিশ্চিত ফল পাবেন।
রাতে ঘনঘন খাওয়ানোর কারণে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
অনেক বাচ্চা ৬ মাস বয়স হয়ে গেলে আর রাতে খেতে চায় না। যদি দেখেন শিশু বোতল বা বুকের দুধ খাওয়া ছাড়া ঘুমাচ্ছে না অথবা পায়ে নিয়ে না দোলালে ঘুমাতে পারে না। অথবা রাতে বারবার জেগে উঠছে, আর ঘুমাতে পারছে না ।তাহলে বুঝবেন সে আসলে বুঝে ফেলেছে যে কান্না করলে তাকে কোলে নেয়া হবে, খাওয়ানো হবে বা দোলানো হবে।আর এজন্যই সে বেশি বেশি কাঁদে।
রাতের খাবার বন্ধ করার আগে শিশুর ডাক্তারের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করে নিবেন।
যা করতে পারেন
এক বছরের বেশি বয়সী যেসব শিশু বারবার রাতে খেতে ওঠে তাদেরকে ঘুমের প্রশিক্ষণ দেয়া বেশি জরুরি।তাছাড়া বাচ্চাকে শিখাতে হবে কিভাবে সে নিজেকে শান্ত করতে পারে এবং একা ঘুমাতে পারে, যাতে বারবার তাকে কোলে নিয়ে দোলাতে বা খাওয়াতে না হয়। প্রথমে হয়তো একটু সময় লাগবে, কিন্তু একবার শিখে গেলে, সে রাতের বেলা নিজেই ঘুমিয়ে পড়বে।
আমি নিজে বাচ্চাকে একা ঘুমাতে দেই না, একসাথেই ঘুমাই। এবং রাতে বারবার দুধ খাওয়ার ব্যাপারে বিরক্ত বোধ করি না। বাচ্চার বয়স তিন বছর। বাচ্চার শরীর ও চাহিদা এবং আপনার সামর্থ্য বুঝে বাচ্চার রুটিন তৈরি করুন।
References
- American Academy of Pediatrics, Pediatrics, Sleep-Related Infant Deaths: Updated 2022 Recommendations for Reducing Infant Deaths in the Sleep Environment
- Mayo Clinic, Baby Naps: Daytime Sleep Tips, October 2022. |
- American Academy of Pediatrics, When Does Teething Start?, June 2024.
- American Academy of Pediatrics, Ibuprofen Dosage Table for Fever and Pain, August 2023.
- American Academy of Pediatrics, How to Keep Your Sleeping Baby Safe: AAP Policy Explained, October 2023.
- American Academy of Pediatrics, Baby Teething Pain, December 2018.
- National Institutes of Health, National Library of Medicine, The Long-Term Effects of Light Exposure on Establishment of Newborn Circadian Rhythm, October 2018.
- Stanford Children’s Health, Infant Sleep, 2024.
- Stanford Children’s Health, Newborn Sleep Patterns, 2024