অসুস্থ বাচ্চাকে কিভাবে খাওয়াব

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

শরীর ভালো না লাগলে যে কেউই খাওয়া বা খেলার মত সাধারণ কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এটা যে সবসময় খারাপ কিছু তা কিন্তু নয়।

জ্বর কোনো রোগ নয় বরং এটি অন্য কোনো রোগের লক্ষণ।
আরো পড়ুন: শিশুর জ্বরে ঘরোয়া চিকিৎসা

যেমন ধরুন যখন যদি পেটের অসুখ, ডায়রিয়া বা বমির ক্ষেত্রে খাওয়ার পরিমাণ একটু কমিয়ে দিলে পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায়, রোগী সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। কিছু ভাইরাস আছে যেগুলোর কারণে জ্বর তো হয়ই, পাশাপাশি খাবারে অরুচিও হয়।

খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো না করলেও যদি পরিমাণ মতো পানি পান করে আর প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকে তাহলে চিন্তা করবেন না। অধিকাংশ ছোটখাটো অসুখের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো খাবার খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না।

অসুস্থ শিশুকে খাওয়ানোর জন্য ডাক্তারের সাধারণ পরামর্শ হলো:

প্রচুর পানি/তরল

শিশুর যদি জ্বর, শ্বাসতন্ত্রে ইনফেকশন (ঠান্ডার অসুখ বা ফ্লু), ডায়রিয়া বা আমাশয় হয়–খেয়াল রাখতে হবে সে যেন পানিশূন‍্যতায় না ভোগে। অসুস্থ বাচ্চাকে এজন্য বেশি বেশি পানি এবং তরল খাবার খাওয়াতে হবে।যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ খায় বা ফর্মুলা খায় তবে সে যতটুকু পান করতে চায় ততোটুকু পান করতে দিন। যদি না ডাক্তার অন্য কোনো পরামর্শ দেন।
সাধারণত যেসব বাচ্চা বুকের দুধ খায় তারা শরীর খারাপের লক্ষণ দেখানোর আগে থেকেই বেশি বেশি বুকের দুধ খেতে শুরু করে। এজন‍্য অসুস্থ বাচ্চা যখনই বুকের দুধ খেতে চায়, তাকে খেতে দিবেন। অসুস্থ অবস্থায় বুকের দুধ শুধু তার পেট ভরায় না, ওষুধেরও কাজ করে। 

আরো পড়ুন: শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি

একটু বড় শিশু যারা সলিড খেতে শুরু করেছে এবং দুধ খেতে চায়না, তাদেরকে পানি সমৃদ্ধ তরল খাবার খাওয়াতে পারেন। যেমন ঘরে তৈরি ফলের রস। বাজারে যেসব জ‍্যুস কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোতে কিন্তু কোনো ফলের নির্যাস নেই! যে কোনো ফলে অর্ধেকের বেশি পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করে জ‍্যুস বানিয়ে নিন।  

মুরগির স্যুপ, টমেটো স‍্যুপ, ভেজিটেবল স‍্যুপ– শুধু রসুন পেঁয়াজ দিয়ে করা তরল খাবার অসুস্থ অবস্থায় খেতে ভালো লাগে। বেশ এনার্জিও দেয়।   

তবে অসুস্থ বাচ্চাকে সারাদিনে অনেকবার তরল খাওয়াতে চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যতটুকু খাক–এমনকি এক চুমুক পরিমাণ খেলেও শরীরের জন্য ভালো।

শিশুর ডায়রিয়া যদি চরম আকার ধারণ করে, বার বার বমি হয় তাহলে ডাক্তার হয়তো ওরস‍্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইট তরল (পিডিয়ালাইট) খাওয়াতে বলতে পারে। এগুলো পানিশূন্যতা দূর করতে শিশুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি।কিন্তু কোনোভাবেই দোকান থেকে স্পোর্টস ড্রিংকস কেনা যাবেনা কারণ এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে যা ডায়রিয়া আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।বেশি বেশি তরল খাবার নিশ্চিত করার পর শিশু যদি ঠিকমত প্রস্রাব করে তাহলে বুঝতে হবে সে ভালো আছে। যদি প্রস্রাব না করে বা কম করে তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। 

শিশুর পায়খানার রঙ, গঠন বা ধরন প্রতিদিন– এমনকি প্রতিবারেই বদলাতে পারে।
আরো পড়ুন: শিশুর পায়খানার কোন রঙের মানে কী?
পছন্দের খাবার দিন

শিশু যদি অসুস্থ থাকে তখন কিছু খাবার তার মুখে ভালো লাগে, আবার কোনো কোনো খাবার একদমই ভালো লাগে না। এমনটা কিন্তু বড় মানুষেরও হয়। অসুস্থ বাচ্চাকে মসলা ছাড়া শুধু সেদ্ধ করা খাবার,কম লবণ বা লবণ ছাড়া, ঝাল ছাড়া খাবার (যেমন জাউ ভাত, সেদ্ধ আলু) বেশ ভালো কাজ করে। তাছাড়া ক্র্যাকার্স এবং পাস্তা দেয়া যেতে পারে যেগুলো কোনো ধরনের লবণ/চিনি ছাড়া পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি।শিশু যদি এসবের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবারগুলো কোনো সমস্যা ছাড়াই খেতে পারে তাহলে সেগুলো বন্ধ করার দরকার নেই।অসুস্থতার কারণে যখন খিদে লাগা কমে যায় বা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তখন শিশুর পছন্দ অপছন্দকে খুব গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।এই সময়ে যদি শিশু শুধুমাত্র বুকের দুধ আর নাশপাতি বা এই জাতীয় মিষ্টি ফলই পছন্দ করে তবে তাকে দুই তিন দিন ধরে শুধু এগুলোই দিতে হবে।

যে শিশু কলা খেতে পছন্দ করে, ঠাণ্ডার অসুখ হয়েছে বলে তাকে কলা দেয়া বন্ধ করবেন না।বরং অসুখের সময় ওর প্রিয় খাবারই (চকলেট, চিপস নয়!) বেশি বেশি দিন।  



খাওয়ার জন্য জোর করবেন না

অসুস্থ বাচ্চা অল্প অল্প করে বার বার খেতে পছন্দ করতে পারে।কিন্তু এভাবেও যদি খেতে না চায় আর আপনি যদি এটা নিয়ে বেশি চিন্তায়ও থাকেন সেক্ষেত্রেও জোর করা যাবেনা।

শিশু যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে একবারও না খায়, মনে রাখতে হবে এই অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। তবুও সতর্কতার জন্য বিষয়টি শিশুর ডাক্তারকে জানিয়ে রাখতে হবে।অসুস্থ বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন‍্য জোর করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। 

খেতে জোর করা শিশুর অতিরিক্ত খাওয়া এবং অতিরিক্ত ওজনের জন্য দায়ী
আরো পড়ুন: শিশুকে খেতে জোর করলে ক্ষতি কী?

অসুস্থ অবস্থায় শরীর যতটুকু খাবার প্রয়োজন, ঠিক ততোটুকুই গ্রহণ করে বা এমন প্রবণতা থাকে। কিন্তু শরীর যখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে তখন ক্ষুধার ব্যাপারটাও স্বাভাবিক হয়ে যায়। এমনকি অসুখ হবার পরে স্বাভাবিকের তুলনায় খিদে কিছুটা বেড়েও যায়।তাই সুস্থ হওয়ার পর যখন শিশু আগের তুলনায় কিছুটা বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া শুরু করে সেটা দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা ওর সেরে ওঠার অংশ। 

রেফারেন্স: 

  1. American Academy of Pediatrics, Surviving the Stomach Bug: Truths and Tips for Parents, November 2015.
  2.  American Academy of Pediatrics, Fever Without Fear, April 2016.
  3. KidsHealth by Nemours, Fevers, September 2018.
  4. National Institutes of Health, National Library of Medicine, Medline Plus, When Your Baby or Infant Has a Fever, October 2019.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *